সৃষ্টির প্রথম পদার্থ

।।ও৩ম্।।

সৃষ্টির প্রথম পদার্থঃ পর্ব (১)
এখন ওই কাল তত্ত্ব (প্রকৃতি) তমোগুণকে সক্রিয় করে তমোগুণকে জাগ্রিত করে প্রথম পদার্থ যা বানানো হয়েছে তাহাকে মহৎ বলা হয় অর্থাৎ যে ত্রিগুণ প্রকৃতির সবগুণ কান্ত ছিল, প্রসুপ্ত ছিল, নিষ্ক্রিয় ছিল। ওই 'ও৩ম' রশ্মি কাল তত্ত্ব নিয়ে সবার সক্রিয় করে দেয়। সম্যবস্থাতে প্রকিতির অবস্থা অসম্য হয়ে যায়। বিক্ষিব্দ হয়ে যায়, কণ, গুণ প্রকট হয়। ওই অবস্থার নাম 'মহৎ' আর অহংকার ও মন সমষ্টি। মন সমষ্টি অহংকার এই মহত্ত্বকে আগের দুই রূপ, কেননা ইহার তিন চরণ। মহৎ, অহংকার আর মন। এই তিনই একই অন্তর হয়। যেমন আম পাকা হয় আর কাঁচা হয়। কিন্তু ইহা উভয় আম তথাপি মহৎ তত্ত্ব এক্সসাইজ স্টেটে চলে যায় অর্থাৎ পূর্ণাবস্থায় চলে যায়, চালনাবস্থা প্রাপ্ত করে তাহাকে অহংকার বলা হয়। তার আগে মন্ত্রের মন বলা হয়। ইহার জন্য আমাদের ঋষিদের কিছু বচণ উদ্ধৃত করছি----
(তৈত্ত০ স০ ৪/১/৯/১; মৈ০ স০ ২/৭/৭) তে লিখেছেন-
প্রজাপতায়ে মনয়ে স্বাহাঃ। ইহা মনকে প্রজাপতি বলে।
(তাণ্ড০ ব্রা০ ৪/১০/২) তে বলেছেন-
প্রজাপতি রূবাব মহান। ইহা মহান এই মহতত্ত্বই প্রজাপতি।
(কৈ০ ব্রা০ ১০/১/২৬/৩ আর শ০ ব্রা০ ৪/১/১/২) তে লিখেছেন-
প্রজাপতি রূয় মনঃ। মনকে প্রজাপতি বলে।
(কাঠ০ স০ ৩১/১৫ আর ৩৫/১৭) তে লিখেছে-
মন য়ে রই প্রজাপতিহিঃ। আর জৈ০ ব্রা০ ২/১২) এ লিখেছেন-
মহৎ রই প্রজাপতিহিঃ। অর্থাৎ এই প্রজাপতি মনকেই বলা হয়েছে মহৎকেও বলা হয়েছে।
অর্থাৎ ইহা সিদ্ধি হয় যে মন আর মহৎ উভয় একই পদার্থের না। কিছু অবস্তায় ভেদ অবশ্যই আছে। এখন এই সৃষ্টিতে ইহা দেখতে যায় তো এমন কোন পদার্থ আছে যে সক্রিয় আর সর্ব প্রথমে উৎপন্ন হয়েছে? আর যা এই সৃষ্টির কারণ, উপাদান কারণ ওই এই পদার্থ মহৎ তত্ত্বকে বুদ্ধিও বলা হয়। অহঙ্কার আর মন ইহাই প্রাথমিক পদার্থ। ইহা থেকে সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ড রচনা হয়েছে। ইহা থেকে স্পেজ হয়েছে, ইহা থেকে পাটিকেল বানিয়েছে, ইহা থেকে ফ্রোটন সবকিছু, ইহা তেকে বানানো হয়েছে। এর আগে কোন পদার্থ নেই।
(শুশ্রু০ স০ ১/৪) শরীর স্থানমঃ তস্মাৎ অব্যক্ত মহাৎ উৎপ্ধতি তং লিঙ্গ য়ে বঃ।।
(তস্মাৎ অব্যক্তাঃ) ওই অব্যক্ত প্রকৃতি থেকে মহান মহত্ত্ব উৎপদ্ধত্তিতে উৎপন্ন হয়েছে। ইহা কেমন?
(তং লিঙ্গ য়ে বঃ) প্রকৃতিশীল অর্থাৎ প্রকৃতি লক্ষণযুক্ত হয়।
ইহার অর্থ যেমন প্রকৃতি অব্যক্ত হয়। ঐরূপই মহৎ তত্ত্বই অব্যক্ত হয়। যেরূপ প্রকৃতি অন্ধকার রূপ এরূপই মহৎ তত্ত্বও অন্ধকার পূর্ণ হয়। যেরূপ প্রকৃতি নিষ্ক্রীয় হয়। ঐরূপই মহৎ তত্ত্বও নিষ্ক্রীয় হয়। একেবারে একই হয় না। একই সর্বদা নিরপক্ষরূপে নিষ্ক্রীয় নিরপক্ষ রূপে অন্ধকারপূর্ণ নিরপক্ষ রূপে লক্ষণ থেকে হিত কোন পদার্থ থেকে থাকে সে প্রকৃতিই আছে। যেমন এই লোকে এই সৃষ্টিতে কোন পদার্থে সপক্ষে দেখবেন তো মহৎ তত্ত্বই এমনই যদি প্রকৃতির সপক্ষে দেখেন। তবে মহৎ তত্ত্ব ব্যক্ত, মহৎ তত্ত্ব লক্ষণযুক্ত, মহৎ তত্ত্ব দীপ্তিমান, সৃষ্টির অন্য যে পদার্থ সপক্ষে দেখেন তো মহতত্ত্ব প্রকৃতি যেমন অন্ধকারপূর্ণ অব্যক্ত পদার্থ।
সাংখ্য দর্শনে মহর্ষি কপিল বরলছেন-
মহৎ, অহঙ্কার আর মন পৃথক-পৃথক মেনেছেন। পরন্তু এক সূত্র বলছে-
“মহেদাকক্ষ মাধ্যেম্ কারম্ তনমহঃ” যে মহৎ তত্ত্বের পদার্থ আছে সব থেকে প্রথমে তাহা করণ রূপ পদার্ মনই। ইহা এরকম সংকেত পাওয়া যায়, মনই মহৎ হয়। আর যে আমাদের ভিতরে য়ে মন আছে, সূক্ষ্ম শরীরের ভাগ মন, বুদ্ধি আর অহঙ্কার ইহাও ওই যে সমষ্ঠি বরং সমষ্ঠিবান মন, সমষ্ঠিবান বুদ্ধি, সমষ্ঠিবান অহঙ্কার। সর্বত্র ব্যপ্ত। আর যে জীবাত্মা, কিছু ক্ষেত্রে, জীবাত্মার যে অধিকার কিছু ক্ষেত্রে তাহা আমাদের নিকটে। মহৎ তত্ত্ব অর্থাৎ বুদ্ধি তত্ত্বর লক্ষণ বলতে যেয়ে মহর্ষি কপিল মহারাজ বলেন-
“অধ্যবসায় বুদ্ধিঃ।” (সাং০ দ০ ২/১৩) এ বুদ্ধি তত্ত্ব (অধ্যবসায়ঃ) সতত প্রয়োযত্নকারী। ইহা সতত প্রয়োযত্নকারী ইহা থেকে সিদ্ধ হয় যে নিষ্ক্রীয় নয়। বর্তমান পদার্থের সপক্ষে নিষ্ক্রীয় লাগে বরং নিষ্ক্রীয় নয় কারণ তিন গুণই জাগরণ হয়ে থাকে। তিন গুণই সক্রিয় হয়ে উঠে, এইজন্য ইহাকে নিক্রিয় প্রসুপ্ত বলে না। হ্যা ওই গুণের সক্রিতাকে আমরা কিছু টেকনোলজির আধার পর কখনো অনুভব করেনি এইজন্য আমরা অবশ্যই নিষ্ক্রীয় বলি। লোকের অন্য পদার্থের অপেক্ষাতে সতত প্রয়োযত্নকারী অর্থাৎ যাহা কিছু আছে। ও হয় মহৎ তত্ত্ব যে সময় বানিয়েছে ওই কিছু ক্রিয়াকে ওই মহৎ তত্ত্ব থেকে যে-যে পদার্থ বানিয়েছে। ও বেপ্ছের অন্তর, ও পাটিকেলের অন্তর, কথিত ষ্ট্রিকংকের অন্তর, বিভিন্ন ছন্দ রশ্মির অন্তর, ও বিভিন্ন প্রাণ রশ্মির অন্তর, ও মরুত রশ্মির অন্তর ও বৃহতি রশ্মির অন্তর সবকিচুর ভিতর ওই মহৎ তত্ত্ব একটিভেট থাকে, সক্রিয় থাকে। সবই পদার্থের এক বহুত বড় কারণই হয়, সাধনই হয়, শক্তিও হয় আর সবার ধারক হয়। এইজন্য অধ্যবসাতে বুদ্ধি, সব সময় ও সক্রিয় থাকে, সব প্রয়োযত্নশীল থাকে, ধারণ করার জন্য, প্রেরণ করার জন্য, প্রত্যেক পদার্থকে, ও কখনো বিরাম করেন না, নিষ্ক্রীয় হয় না।
মহৎ তত্ত্বের বিষয়ে ভগবান ব্রহ্মা বলেছেন-
অব্যক্তাতুপূর্বমুত্পন্নো মহানাত্মা মহামতিঃ।
আদির্গুণানাং সর্বেষাং প্রথমঃ সর্গ উচ্যতে।।১।।
মহানাত্মা মতির্বিষ্ণুর্জিষ্ণুঃ শম্ভুশ্চ বীর্য়বান্।
বুদ্ধিঃ প্রজ্ঞেপলব্ধিশ্চ তথা খ্যাতির্ধৃতিঃ স্মৃতি।।২।।
(মহা০ ভা০ আশ্ব০পর্ব০ ৪০/১-২ গীতাপ্রেস)
ব্রহ্মা জী বলেন- মহর্ষিগণ! প্রথমে অব্যক্ত প্রকৃতি থেকে উৎপন্ন মহান আত্মত্বরূপ মহাবুদ্ধিতত্ত্ব উৎপন্ন হয়। ইহা সবগুণের আদি তত্ত্ব আর প্রথম সর্গ বলা হয়।।১।।
মহান আত্মা, মতি, বিষ্ণু, জিষ্ণু, শম্ভু, বীর্যবান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, উপলব্ধি, খ্যাতি, ধৃতি, স্মৃতি-এই পর্যায়বাচী নামের দ্বারা মহান আত্মার পরিচয় হয়। তাহার তত্ত্বকে প্রাপ্তকারী বিদ্বান ব্রাহ্মণ কখনো মোহতে পড়ে না।।২।।
অনেক পর্যায়বাচী গুণবাচী নাম এই শ্লোকে উদ্ধৃত করেছেন-ইহার প্রথম নাম অব্যক্তা প্রকৃতি উৎপন্ন মহান প্রথম লক্ষণ, প্রথম বিশেষণ (মহান) অত্যন্ত ব্যাপক, এই সৃষ্টিতে যত পদার্থ আছে, ওই সব পদার্থ থেকে সব থেকে অধিক সর্বব্যাপক থাকে, নিরপক্ষ রূপে সর্বব্যাপক ঈশ্বর! ঈশ্বর নিপক্ষরূপে সর্বব্যাপক পদার্থ, চেতন। আর তাহার পরে যে দ্বিতীয় পদার্থ আছে সে (প্রকৃতি) ঈশ্বরের অপেক্ষা, প্রকৃতি সর্বব্যাপক নয়, কেননা সৃষ্টির অপেক্ষা প্রকৃতি সর্বব্যাপক অথবা কোন জড় পদার্থের অপেক্ষা প্রকৃতি, প্রকৃতিরূপী জড় পদার্থ সর্বব্যাপক। সব থেকে সূক্ষ্ম কিন্তু ঈশ্বরের অপেক্ষা সর্বব্যাপকই নয় আর সব থেকে সূক্ষ্মই নয়। কেননা প্রকৃতি ঈশ্বর থেকে স্থুল এইজন্য ঈশ্বর প্রকৃতিতে ব্যাপক আর ঈশ্বর প্রকৃতি থেকে ব্যাপক বিস্তারকারী এইজন্য ঈশ্বরই প্রকৃতির ভিতরেও আর বাহিরেও। আর সম্পূর্ণ সৃষ্টি তত্ত্ব, মনস তত্ত্ব, মহৎ তত্ত্ব প্রকৃতির অন্তরই আছে, আর প্রকৃতি তাহাদের অন্তর ব্যাপ্ত আছে। কিন্তু যতদূর বিস্তার প্রকৃতির, যতদূর ভলিয়ম, যতদূর আয়তনে প্রকৃতি আছে। তাহার থেকে কম আয়তনে মহৎ তত্ত্ব, অর্থাৎ প্রকৃতি অধিক ব্যপ্ত। মহৎ তত্ত্বের অপেক্ষা, ঈশ্বরের অপেক্ষা কম। এই মহৎ তত্ত্বের এক নাম আত্মা, আত্মা আর পরমাত্মার কথা বলছি না। আত্মা মহৎ তত্ত্বেরই নাম। কেননা সতত রূপে, সূক্ষ্ম রূপে, সৃষ্টির প্রত্যেক পদার্থে নিরন্তর বিচারণ করে, নিরন্তর নিজের কর্ম করে। আর ইহা বলে নিরন্তর প্রেরিত করে, আত্মা রূপ যেভাবে আমাদের শরীরকে আত্মা প্রেরিত করে। ঐরূপ সম্পূর্ণ সৃষ্টির জড় পদার্থকে মহৎ তত্ত্বই প্রেরিত করেন। ঈশ্বর আর কাল তত্ত্বের পশ্চাৎ, এইজন্য ইহাকে বলে আত্মা কোথাও যদি কোন ভাইব্রেশন যায় তো মহৎ তত্ত্ব যায়, কোথাও যদি পাটিকেল কমেন্ট করে তো মহৎ তত্ত্ব করে, স্পেজ এর ইউনিট মহৎ তত্ত্বের অন্তর বসে, পাটিকেলের ভিতর মহৎ তত্ত্ব বসায় আর বিভিন্ন গ্যালাক্সির ধারণকারী সব থেকে অন্তিম পদার্থ মহৎ তত্ত্ব হয় এইজন্য ইহাকে বলে আত্মা। সতত বিচারণকারী সবার নিয়ন্ত্রক, আর তৃতীয় বিশেষণ (মতিহি) “মন্যতে ইতি কান্তিকর্মা মন্যতে ইতি অর্চতিকর্মা” (নিঘ০ ২/৬ আর ৩/১৪) ইহা পদার্থ সূক্ষ্ম, ব্যাপকবল আর অত্যন্ত মন্দ অব্যক্ত দীপ্তি থেকে যুক্ত হয়। ইহার দীপ্তি “প্রকৃতি তমোভূতম্.............” এই স্বরূপযুক্ত কিন্ত এই মহৎ তত্ত্ব এস্বরূপযুক্ত নয়।তথাপি জগতের সাপেক্ষ তমোগুণ, বরং প্রকৃতি সাপেক্ষ “অর্চতিকর্মা.....” অর্থাৎ দীপ্তিযুক্ত অত্যান্ত মন্দ দীপ্তি ইহার তুলনা স্থান প্রকৃতি থেকে কোন অন্ধকারযৃক্ত পদার্থ করেন তো মহৎ তত্ত্ব তাহার থেকে গাঢ় অন্ধকারে পরন্তু ঐ মহৎ তত্ত্বের তুলনা প্রকৃতির সম্যবাস্থাতে করেন প্রকৃতিরূপী পদার্থে করেন ঐ মতৎ তত্ত্বে সূক্ষ্ম দীপ্তি উৎপন্ন হয়ে থাকে আর এইজন্য ইহাকে বলা হয় মতিহি। আর দ্বিতীয় কথা এই মহৎ তত্ত্বে সূক্ষ্ম ও৩ম্ রশ্মি, কালতত্ত্ব নিরন্তর ব্যাপ্ত থাকে ইহার কারণে মহর্ষি য়জ্ঞবাল্য মহারাজ শতপথ ব্রাহ্মণে লিখেছেন-
বাক্ মই মতির বাচম্ হিদম্ সর্বম্ মনুতে।। ইহা বাক্ ওঙ্কার রূপী বাক্, ওঙ্কার রূপী বাক্ ইহাই মহৎ তত্ত্ব। ইহা থেকে সম্পূর্ণ সৃষ্টিকে প্রকাশিত করে রেখেছে, দীপ্তিযুক্ত করে রেখেছে, কান্তিযুক্ত করে রেখেছে। যেখানে এই কথার প্রকাশের সম্বন্ধ আছে, প্রকাশ যেখানে-যেখানে আছে ওই-ওই মূলের সবথেকে মূল তো ঈশ্বরই









মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাণী চার প্রকার

বৈদিক পঞ্চ মহাযজ্ঞ

ঋগ্বেদ রাত্রিসূক্তঃ