ঋগ্বেদ সংগঠনসূক্তঃ

সংগঠন সূক্ত (ঋগ্বেদ ১০|১৯১|১-৪)



সংসমিদ্যুবসে বৃষন্নগ্নে বিশ্বান্যর্য় আ।
ইডস্পদে সমিধ্যসে সময় নো বসূন্যা ভর।।১।।

পদার্থঃ  (বৃষন্) হে সুখ বর্ষণকারী পরমাত্মন (অর্য়ঃ) আপনি স্বামী হয়ে (বিশ্বানি - ইত্) সব জড় জঙ্গম বস্তুকে (সৎ সম্- অ য়ুবসে) সম্যক যথাযথভাবে সংযুক্ত-সমপ্রাপ্ত ['সমুপোদঃ পাদপূরণে' অ০ ৮.১.৬] (ইডঃ-পদে) পৃথিবী-পার্থিব শরীরের পদে-স্হানে অথবা স্তুতিবানীর আধ্যাত্ম যজ্ঞে ['ইডা পৃথিবীনাম' নিঘ০ ১.১] (সমিধ্যসে) সম্যক প্রকাশিত হয়ে আপনি (নঃ) আমাদের জন্য (বসূনি) সংগ্রহ করা ধনকে (আভর) প্রাপ্ত করান।।১।।

ভাবার্থঃ  সুখের বর্ষক পরমাত্মা সমস্ত জড় জঙ্গম বস্তুতে সমপ্রাপ্ত হয়ে দেহের বিশিষ্ট স্হান হৃদয়ে স্তুতিবাণীর আধ্যাত্ম যজ্ঞে সাক্ষাৎ করার মাধ্যমে মানুষের জন্য সংগ্রহ করা ধনকে প্রদান করেন।।১।।


সং গংচ্ছধ্বং সং বো  মনাংসি জানতাম্।
দেবা বাগং য়ার পূর্বে সং জানানা  উপাসতে।।২।।

পদার্থঃ  (সঙ্গচ্ছধ্বম্) হে মনুষ্য! তোমরা পরস্পর সঙ্গত হয়ে যাও, সমাজের রূপে এক হয়ে যাও, এইজন্য যথা (সংবদধ্বম্) তোমরা কথোপকথন কর কিন্তু বিবাদ নয়, এইজন্য যেমন (বঃ-মনাসি) তোমাদের মন (সং জানতাম্) যুক্তিযুক্ত হয়ে যাবে, এক হয়ে যাবে, এইজন্য যে (সং জানানাঃ পূর্বে দেবাঃ) একমন হয়ে পূর্বের বিদ্বান (য়থা) যেরূপ (ভাগম্-উপাসতে) নিজের অধিকার বা লাভকে সেবন করে থাকে তোমরাও ঐরূপ কর।।২।।

ভাবার্থঃ  মনুষ্যের মধ্যে আলাদা আলাদা দল হওয়া উচিত না। সবাই মিলেমিশে এক সূত্রে বেধে রবে,পরস্পর কথোপকথন করবে,একে অন্যের সুখ, দুঃখ, অভিপ্রায়কে শুনবে আর এইজন্য কথোপকথনের মাধ্যমে সবার মন একরূপ বানাবে,এক লক্ষ্য তৈরি করবে আর এক লক্ষ্য এইজন্য বানানো উচিত কারণ যেরূপ শ্রেষ্ঠ বিদ্বান ব্যক্তি এক মন তৈরি করে মানবের উত্তম সুখ প্রাপ্ত করতে থাকে তোমরাও সেইরূপ কর।।২।।


সমানো  মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী  সমানং মনঃ সহ চিত্তমেসাম্।
সমানং মন্ত্রমভি মন্ত্রয়ে বঃ  হবিসা জুহোমি।।৩।।

পদার্থঃ (মন্ত্রঃ সমানঃ) তোমাদের বিচার এক হোক (সমিতিঃ সমানী) প্রাপ্তি অথবা কার্য প্রবৃত্তি এক হোক (এষাং-সমানং মনঃ) এই প্রকার তোমাদের এক মন্ত্রের (চিত্তং সহ) সাথে চিত্তও এক হোক (বঃ সমানং মন্ত্রম্) তোমাদের এক মন্ত্রে (অভিপ্রায়ে) সম্পাদিত করেছি, বানিয়েছি (বঃ) তোমাদের (সমানেন হবিষা) এক প্রার্থনাপোসনা কর্ম দ্বারা (জুহেমি) আপন হোক।।৩।।

ভাবার্থঃ মনুষ্যের বিচার, কার্যপ্রবৃত্তি, মন আর চিত্ত এক হওয়া উচিত তথা স্ত্বতি, প্রার্থনা, উপাসনা এক হওয়া উচিত।।৩।।


সমানী ব আকূতিঃ সমানা হৃদয়ানি বঃ।
সমানমস্তু বো মনোযোগ য়ার বঃ সুসহাসতি।।৪।।

পদার্থঃ  (বঃ) হে মনুষ্য! তোমাদের (আকূতিঃ) আমিত্ব ভাবনা (সমানী) এক হোক (বঃ-হৃদয়ানি) তোমাদের হৃদয়-সঙ্কল্পিত বৃত্ত (সমানা) এক হোক, কদাচিৎ একে অন্যের প্রতি মনোমালিন্য না হয় (বঃ) তোমাদের (য়থা) যেভাবে হোক (অসতি) উত্তম সহযোগী হয়ে বলবে।।৪।।

ভাবার্থঃ মনুষ্যের অহংকার, হৃদয়-সঙ্কল্পিত ব্যবহার এক হোক, মন এক হওয়া উচিত আর ইহা পরস্পর সহযোগে আবশ্যক হয়, মনুষ্যের পরস্পরের সহযোগে থাকাই মানবতা জানা উচিত।।৪।।

ভাষ্যঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক  'বিদ্যামার্তণ্ড'

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাণী চার প্রকার

বৈদিক পঞ্চ মহাযজ্ঞ

ঋগ্বেদ রাত্রিসূক্তঃ