ব্রতঃ গহণ সত্য থেকে অসত্যের দিকে

।।ও৩ম্।।
ব্রতগ্রহণঃ অসত্য থেকে সত্যের দিকে

ঋষিঃ পরমেষ্ঠী প্রজাপতিঃ। দেবতাঃ অগ্নিঃ। ছন্দঃ আর্চী ত্রিষ্টুপ্।
অগ্নে বৃতপতে বৃতং চরিষ্যামি তচ্ছকেয়ং তন্মে রাধ্যতাম্।
ইদমূহমনৃতাত্ সত্যমুপৈমি।।৫।। যজু০ ১/৫

পদার্থঃ হে (ব্রতপতে) ব্রত পালনকারী (অগ্নে) অগ্রনায়ক জগদীশ্বর, রজন বা বিদ্যান! আমি (ব্রতং চারিষ্যামি) ব্রতের অনুষ্ঠান করব। (তত্) ওই ব্রতকে (শকেয়ম্) পালন করাতে সমর্থ হবো। (তত্ মে) সে আমার ব্রত (রাধ্যনাম্) সিদ্ধ হোক। সে ব্রত এই হয় যে (অহং) আমি (ইদং) এই (অনৃতাত্) অসত্যকে ছেড়ে (সত্যম) সত্যকে (উপৈমি) প্রাপ্ত করবো।।৫।।

হে সর্বাগ্রাণী বিশ্বনায়ক জগদীশ্বর আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রতপতি। আপনার উৎপত্তি-স্থিতি, প্রলয়, ন্যায়, নিষ্পক্ষতা, পরোপকার, সত্যনিষ্ঠা আদি অনেক ব্রতকে সেচ্চায় গ্রহণ করে, যাহার নিজের সদৈব পালন করেন। অতএব আপনার সাক্ষী রেখে আজ আমিও এক ব্রত গ্রহণ করছি। সে আমার ব্রত এই যে আজ থেকে আমি অসত্যকে ত্যাগ করে সদা সত্যকে পালন করবো। এখনো পর্যন্ত আম নিজের জীবনে অনেক অবসরে অসত্য ভাষণ আর সত্য আচরণ করেছি, কোনবার প্রলোভনে পড়ে মন, বাণী আর কর্ম দ্বারা অসত্যে লিপ্ত ছিলাম। পরন্তু আজ আমি আপনার সম্মুখে ওই অসত্য থেকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছি। আমার গুরুই আমাকে শিখিয়েছে যে সত্যের গ্রহণ আর অসত্যেকে ছাড়াতে সর্বদা উদ্যত থাকা উচিত। আপনি ঐরূপ শক্তি দিন যে এই ব্রতকে আমি পালন করতে পারি।।৫।।

যদি কখনো আমি নিজের ব্রতকে ভূলে সত্য থেকে বিমুখ হতে থাকি তো আমার হৃদয়ে বসে আপনি আমাকে আমার ব্রত স্মরণ করিয়ে আমাকে বাচিয়ে নেবেন। এরূপ কৃপা করুন যে আমি নিজের জীবনের অন্ত পর্যন্ত এই ব্রতের পালন করতে থাকব আর এই ব্রতপালন দ্বারা প্রাপ্ত সুমধুর ফলের আস্বাদন থেকে কৃতকৃত্য হতে থাকব।

ব্রতপতি জগদীশ্বরকে অতিরিক্ত অন্য ব্রতপতিকেও আমি নিজের এই ব্রতের সাক্ষী বানাব। যদি আমি নিজের রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হয়ে সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘে গিয়ে, তবে তাহার অধ্যক্ষরূপ ব্রতপতির সম্মুখ সদা সত্যেরই পক্ষ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করছি। যদি আমি রাজ্য পরিষদের সদস্য বা বাজ্যের কোন উচ্চ অধিকারী হই তবে রাষ্ট্রনায়কের সমক্ষ প্রতিজ্ঞা নিচ্ছি যে আমি সদা সত্যেরই পক্ষপোষণ করব। যদি কোন সভার সদস্য হই তো তাহার সভাপতির সম্মুখ, যদি আমি কোন সংস্তার কর্চারী হই তবে ওই সংস্তার অধ্যক্ষের সম্মুখ, যদি কোন বিশ্ববিদ্যালয় অথবা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক অথবা বিদ্যার্থী হই তো তাহার কুলপতি অথবা উপাচার্যর সম্মুখ, যদি আমি কোন সংঘের সদস্য হই তবে সংঘ চালকের সম্মুখ আর যে পরিবারের আমি অঙ্গ হই ওই পরিবারের গৃহপতির সম্মুখে সদা সত্যের পরই চলার ব্রত গ্রহণ করব।

এই সবকিছুর অতিরিক্ত যজ্ঞাগ্নিও ব্রতপতি হয়। প্রভুই সৃষ্টির আরম্ভে যে ব্রত তাহাদের জন্য নিশ্চিত করে দিয়েছি, ওই ব্রতকে সে আজ পর্যন্ত পালন করে এসেছে। অতঃ প্রতিদিন প্রাতঃসায়ং অগ্নিহোত্র করে ওই ব্রতপতি অগ্নির সামনেও সত্যের ব্রত নিচ্ছি। ওই ব্রতপতি অগ্নির উপর উঠে জালিয়ে নিত্য আমার অন্তরাত্মাতে সত্যের জ্যোতির জাগৃত করতে থাকব।

শতপথকারের কথন হয় যে দেবজন সত্যের ব্রতেরই আচরণ করেন, এই কারণে তাহারা যশস্বী হয়। এই প্রকার অন্যও যে কোন সত্যভাষণ আর সত্যের আচরণ করেন, সে যশস্বী হন।
............................................................
টিপ্পনীঃ
১. শকেয়ম্, শক্লৌ শক্তৌ।
২.রাধ্যতাম্, রাধ সংসিদ্ধৌ।
৩, এতদ্ধ বৈ দেবা ব্রতং চরন্তি য়ত্ সত্যং, তস্মাত্ তে য়শ, য়শো হ ভবতি য় এবং বিদ্বাংত্সত্যং বদন্তি।
     শ০ ১/১/১/৫।

ভাষ্যঃ আচার্য ড. রামনাথ বেদালঙ্কার বিদ্যামার্তণ্ড

।।ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি।।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাণী চার প্রকার

বৈদিক পঞ্চ মহাযজ্ঞ

ঋগ্বেদ রাত্রিসূক্তঃ