ঋগ্বেদ নাসাসূক্তঃ
কিমাবরীবঃ কুহ কস্য শর্মন্নম্ভঃ কিমাসীদগহনং গভীরম্ ।। ১।। ঋগ্বে০ ১০/১২৯/১-৭
পদার্থঃ (তদানীম্) সৃষ্টির পূর্বে সেই প্রলয় অবস্থায় (অসত্ ন আসীত্) শূন্য নিত্যান্ত অভাব ছিল না (সত্ ন উ আসীত্) সৎ প্রকট রূপে কিছুই ছিল না (রজঃ ন আসীত্) রঞ্জনাত্মক কণাময় গগণ অন্তরীক্ষও ছিল না [‘ভুজিরঞ্জিম্যাং কিত্’ উণা০ ৪/২১৭; ‘রজঃ সূক্ষ্মধূলিঃ’ দয়ানন্দঃ; ‘রজসোহন্তরিক্ষলোকস্য’ নিরু০ ১২/৭] (পরঃ ব্যোম ন উ) বিশ্বের পরবর্তী সীমারূপ বিশিষ্ট রক্ষক আবর্ত ঘেরা গোলক আকাশও ছিল না (কিম্ আবীরঃ) আবরণীয় অভাব থেকে সুন্দর আবরক কিভাবে হতে পারে? ছিল না (কুহ কস্য শর্মন্) কোথাও? না কোথাও তথা প্রদেশ ছিল; কিসের সুখ নিমিত্ত ছিল [‘শর্ম সুখনাম’ নিঘ০ ৩.৬] (গহনং গভীরম্ম্ভঃ কিম্ আসীত্) গহণ গম্ভীর সুক্ষ্মজলও কিভাবে হতে পারে? অর্থাৎ ছিল না। যাহা হতে ভোগ্য বস্তু উৎপন্ন হয় যাহার সৃষ্টির বীজ ঈশ্বর প্রদান করে থাকে [‘অপ এব সর্জাদৌ তাসু বীজমবাসৃজত্’ মনু০ ১/৮]।। ১।।
ভাবার্থঃ সৃষ্টির পূর্বে শূন্যমাত্র অত্যান্ত অভাব ছিল না পরন্তু এই প্রকট রূপ অবস্থাও ছিল না, রঞ্জনাত্মক কণাময় গগণ ছিল না পরবর্তী সীমাবর্তী আবর্ত ঘেরা ছিল!! যখন আবরণীয় পদার্থ জগৎ ছিল না তো আবর্তও কেন হবে ? তাহাও ছিল না আবার সুখের স্মরণ কিসের জন্য হয়? এবং ভোগ্য ভোক্তার বর্তমানতাও ছিল না, সূক্ষ্ম জল পরামাণু প্রবাহ যা পরামাণু সমুদ্রও ছিল না, বলিবার যোগ্য কিছুই ছিল না, সব কিছু অপ্রকাশিত ছিল।।১।।
ন মৃত্যুরাসীদমৃতং ন তর্হি ন রাত্রা অহ্ন আসীৎপ্রকেতঃ।
আনীদবাতং স্বধয়া তদেকং তস্মাদ্ধন্যত্র পরঃ কিং চনাস।। ২।।
পদার্থঃ (মৃত্যু ন আসীত্) সৃষ্টির পূর্বে মৃত্যু ছিল না; তো কি ভাবে অমৃত থাকতে পারে? (তর্হি) সেই সময় মৃত্যু না থাকায় (অমৃতং ন) অমৃতও ছিল না (রাত্রায়াঃ অহ্নাঃ) রাত্রি দিনের (প্রকেতঃ) প্রজ্ঞান পূর্বরূপ (ন আসীত্) ছিল না (তত্ একম্) তখন এই এক তত্ত্ব (আবাতম্) বায়ূর অপেক্ষা রহিত (স্বদয়া) সাধারণ শক্তি দ্বারা (আনীত্) স্ব সত্তা রূপে প্রাণবান জগৎ ব্রহ্ম তত্ত্ব ছিল (তস্মাত অন্যত্) তাহা ভিন্ন (কিম্ চন) কিছুই (পরঃ ন আস) তাহা হতে অতিরিক্ত ছিল না।। ২।।
ভাবার্থঃ সৃষ্টির পূর্বে মৃত্যু ছিল না এমন কি মরিবার যোগ্য কিছুই ছিল না; তো মৃত্যু কিভাবে হতে পারে? মৃত্যুর অভাবে অমৃতও হতে পারে না এমন কি মৃত্যু অপেক্ষা হতে অমৃতের কল্পনা হয়ে থাকে অতঃ অমৃত হবার কল্পনাও হতে পারে না, দিন রাত্রি পূর্ব রূপও ছিল না এমন কি সৃষ্টি হবার পরে দিন রাত্রির ব্যবহার হয়ে থাকে, হ্যা এক তত্ত্ব বায়ূ দ্বারা জীবন ধারণকারী ন্যায় বিদ্যমান ছিল না কিন্তু সাধারণ শক্তি দ্বারা স্ব সত্ত্বা জীবন ধারণ করা প্রাণবান জাগরিত ব্রহ্ম ছিল তাহা হতে অতিরিক্ত কোন কিছুই ছিল না।। ২।।
তম্ আসীত্তমসা গূঢ়হমগ্রেহ্প্রকেতং সলিলং সর্বমা ইদম্ ।
তুচ্ছয়েনাভ¦পিহিতং যদাসীত্তপসস্তন্মহিনাজায়তৈকম্।। ৩।।
পদার্থঃ (অগ্রে) সৃষ্টির পূর্বে (তমসা) অন্ধকারে (গূঢ়ম্) আবৃত (তমঃ-আসীত্) অন্ধকাররূপ ছিল (ইদং সর্বম্) এই সব সেই সময় (সলিলম্ আঃ) বিস্তৃত জল যে ভাবে (অপ্রকেতম্) অবিজ্ঞেয়ম্-জানিবার যোগ্য ছিল না (তুচ্ছ্য়য়েন) তুচ্ছভাবে (য়ত্ অপিহিতম্) আবৃত তথা ঢাকা (আভু) আভু নামে ব্যাপক উৎপাদান কারণ (আসীত্) ছিল যাহা হতে এই সৃষ্টি আবির্ভূত হয়েছে (তপসঃ) পরমাত্মার জ্ঞানময় তপ দ্বারা (তত্-মহিনা) মহতত্ত্ব এক রূপ উৎপন্ন হয়েছে।। ৩।।
ভাবার্থঃ সৃষ্টির পূর্বে অন্ধকারে আচ্ছাদিত অন্ধকারময় ছিল, জল সমান আয়ব রহিত না জানিবার যোগ্য [আভু] নামে পরমাত্মার সম্মূখ তুচ্ছরূপে এক দেশীয় অব্যক্ত প্রকৃতি রূপ উপাদান কারণ ছিল যাহা হতে সৃষ্টি আর্ভিূত হয়েছিল, তাঁহার জ্ঞানময় তপ দ্বারা প্রথম মহতত্ত্ব উৎপন্ন হয়।। ৩।।
কামস্তদগ্রে সমবর্ততাধি মনসো রেতঃ প্রথমং য়দাসীত্।
সুতো বন্ধুমসতি নিরবিন্দন্ হৃদি প্রতীষ্যা কবয়ো মনীষা।।৪।।
পাদার্থঃ (অগ্রে কামঃ) আরম্ভ সৃষ্টিতে কাম অর্থাৎ অভিলাষ-ইচ্ছাভাব (তত্-য়ত্) সে যে (মনসঃ-অধি) মনের অন্তর (সমবর্তত) বর্ত্তমান হয়ে (প্রথমং রেতঃ আসীত্) প্রথম প্রাণীর বীজ থাকে [‘রেতঃ পুরুষস্য প্রথমং সমাভবতঃ সম্ভবতি’ ঐ০ ৩/২] (কবয়ঃ) ক্রান্তদর্শী বিদ্বান (অসতি) অশরীর চেতন আত্মাতে (সতঃ) শরীরের নিমিত্ত (বন্ধুম্) বাধনকারী ওই শুক্র-মানব বীজশক্তিকে (মনীষা) বিবেচনশীল বুদ্ধি দ্বারা (প্রতীষ্য) প্রতীত করে নিশ্চিত করে (হৃদি) হৃদয়ে (নিঃ-অবিন্দন্) নির্বিণ্ণ হয়ে যায় বৈরাগ্যকে প্রাপ্ত হয়ে যায় ।।৪।।
ভাবার্থঃ আরম্ভ সৃষ্টিতে ভোগের জন্য কামভাব বর্ত্তমান হয়ে যে মানবের বীজ শক্তিরূপে প্রকট হয়, ক্রান্তদর্শী বিদ্বান আত্মার অন্তর শরীরের বাধনকারী হয় তাহার সমক্ষ করে বৈরাগ্যকে প্রাপ্ত হয়।।৪।।
তিরশ্চীনো বিততো রশিমরেষামধঃ স্বিদাসী৩দুপরি স্বিদাসী৩ত্।
রেতোধা আসন্মহিমান আসন্তস্বঘা অবস্তাৎপ্রয়তিঃ পরস্তাত্ ।। ৫।।
পদার্থঃ (রেতোধাঃ) প্রাণী সৃষ্টিতে পূর্ব শরীরের বীজশক্তির কামভাব রেত নামে বলা হয়েছে সেই রেত অর্থাৎ মানব বীজ শক্তিকে ধারণকারী আত্মা (আসন্) ছিল (মহিমানঃ আসন্) জীবাত্মা মহান অর্থাৎ অসংখ্য ছিল (এষাং রয়িম্ঃ) ইহাদের বন্ধন রশি যা লাগাম পূর্বজন্মের কৃত কর্মের সংস্কার [‘অভিশবো বৈ রশ্ময়ঃ’ শ০ ৫/৪/৩/১৪] (তিরশ্চীনঃ বিবতঃ) এই সংস্কার বিস্তৃত হয়েছে যা কি [‘তিরস্তীরো ভবতি’ নিরু০ ৩/২০] (অধঃ স্বিত্ আসীত্) নিকৃষ্ট যোনিতে জন্ম দেবার হেতু তথা (উপরিস্থিত্ আসীত্) উৎকৃষ্ট যোনিতে জন্ম দেবার হেতু (অবস্তাত্ স্বধা) শরীরের অবর ভাগে সাধারণ জন্মগ্রহণ করে (পরস্তাত্ প্রয়তিঃ) এবং শরীরের পর ভাগ মৃত্যু।। ৫।।
ভাবার্থঃ ভোগের কামনারূপ মানব শক্তিকে ধারণকারী আত্মা সৃষ্টির প্রথমে ছিল এবং এ আত্মা অসংখ্য ছিল, ইহাদের পূর্বকৃত সংস্কার বন্ধন যা লাগামের সমান শরীরকে শোষণ করে নেয়; সেই জীবাত্মা নিকৃষ্ট যোনী সম্বন্ধী এবং উৎকৃষ্ট যোনী সম্বন্ধী হয়ে থাকে, শরীরের অবর ভাগে জন্ম হয় এবং পরভাগে প্রয়াণ তথা মৃত্যু হয়।। ৫।।
কো অদ্ধা বেদ ক ইহ প্রবোচৎকুত আজাতা কুত ইয়ং বিসৃষ্টিঃ।
অর্বাগ্দেবা অস্য বিসর্জনেনাথা কো বেদ য়ত আবভূব ।। ৬।।
পদার্থঃ (কঃ) কে (অদ্ধা) তত্ত্ব দ্বারা যথার্থ (বেদ) জানে (কঃ) কে (ইহ) এই বিষয়ে (প্রবোচম্) প্রবচন করতে পারে বলতে পারে (ইয়ং বিসৃষ্টিঃ) এই বিবিধ সৃষ্টি (কুতঃ) কোন নিমত্তি কারণ দ্বারা (কুতঃ অজাতা) কোন উপাদান থেকে প্রকট হয়েছে-উৎপন্ন হয়েছে (অস্য বিসর্জনেন) উহার বিসর্জনে উপাদান কর্তৃক (অর্বাক্ দেবাঃ) পিছে উৎপন্ন হওয়া বিদ্বান (অথ কঃ) পুণঃ কে (বেদ) জেনেছে (য়তঃ আবভূব) যে উপাদান থেকে এসব আবির্ভূত হয়ে উৎপন্ন হয়েছে।।৬।।
ভাবার্থঃ এই বিবিধ সৃষ্টি কোন নিমিত্ত কারণ থেকে এবং কোন উপাদান কারণ থেকে উৎপন্ন হয়েছে? এই কথাকে কোন বিরল বিদ্বানই যথার্থ রূপে জানিতে পারে এমনকি সকল বিদ্বান সৃষ্টি উৎপন্ন হবার পশ্চাৎ হয়েছে অর্থাৎ কোন তত্ত¦ বেত্ত্বা যোগী ই এই গূঢ় রহস্য বুঝিতে পারে মাত্র এবং তাহা বলিতে পারে।। ৬।।
ইয়ং বিসৃষ্টির্য়ত আবভৃব যদি বা দধে যদি বা ন।
য়ো অস্যাধ্যজ্ঞঃ পরমে ব্যোমন্তসো অঙ্গ বেদ যদি বা ন বেদ।। ৭।।
পদার্থঃ (ইয়ং বিসৃষ্টিঃ) এই বিবিধ সৃষ্টি (য়তঃ আবভূব) যে উপাদান দ্বারা উৎপন্ন হয়েছে (অস্য য়ঃ অধ্যক্ষঃ) এই উপাদানের যে অধ্যক্ষ (পরমে ব্যোমন্) মহান আকাশে বর্তমান (অঙ্গ) হে জিজ্ঞাসু! (সঃ) সেই পরমাত্মা (য়দি বা দধে) যদি চায় তো সৃষ্টিকে ধারণ করে সৃষ্টি রূপে স্থিত রাখে (য়দি বা ন) এবং যদি না চায় তো ধারণ করে না অর্থাৎ সংহার করে দেয় (য়দি বেদ) যদি উপাদান কারণকে জানে তবে নিজের বিজ্ঞানে লক্ষিত করে সৃষ্টি রূপে পরিণত করে, (য়দি বা ন বেদ) যদি না জানে স্বজ্ঞানে লক্ষিত না করে তবে সৃষ্টি রূপে করে না বরং প্রলয় করে, এই প্রকার সৃষ্টি এবং প্রলয় সেই পরমাত্মার অধীন ।।৭।।
ভাবার্থঃ এই বিবিধ সৃষ্টি যে উপাদান কারণ হতে হয়ে থাকে সেই উপাদান কারণ অব্যক্ত প্রকৃতির এই পরমাত্মা স্বামী অধ্যক্ষ, এই পরমাত্মা জগতকে উপদান কারণ প্রকৃতি থেকে উৎপন্ন করে থাকে এবং তাহার সংহারও করে থাকে, এবং পরমাত্মা প্রকৃতিকে যখন লক্ষ করে তখন সেই প্রকৃতি হতে সৃষ্টিরূপ ও কার্য নিয়ে আসে এবং সৃষ্টি হয় এবং যদি প্রকৃতিতে সংকল্প বা লক্ষ না করে তবে প্রলয় হয়ে যায়। এই প্রকার সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় পরমাত্মার অধীন।। ৭।।
ভাষ্যঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক ‘বিদ্যামার্তণ্ড’
।। ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি।।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন